August 19, 2025, 7:07 pm

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
আমদানি শুরুর পর দাম বাড়েনি পেঁয়াজের বেসরকারি পর্যায়ে ১০ লাখ টন ডাল ও চিনি আমদানি অনুমোদন কুষ্টিয়ায় কারাগারে হাজতির মৃত্যু কুষ্টিয়ায় পদ্মা ও গড়াইয়ে পানি কমলেও দৌলতপুরে অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দি কুষ্টিয়া শাহিন ক্যাডেট স্কুল/ ছাত্রীর আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে শিক্ষক গ্রেপ্তার কুষ্টিয়ায় বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেল রেসিং খেলতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই কিশোরের মৃত্যু ঝিনাইদহে সীমান্ত অতিক্রমের অভিযোগে ১৭ জন আটক রাজশাহীতে একই পরিবারের চারজনের রহস্যজনক মৃত্যু র‌্যাব-পুলিশের যৌথ অভিযানে কুষ্টিয়ায় স্ত্রী হত্যার অভিযোগে স্বামী গ্রেপ্তার ইসরায়েলের জন্য লুকিয়ে অস্ত্র আনছিল সৌদি জাহাজ, ইতালিতে আটক

শতবর্ষে রবিশঙ্কর// শ্রদ্ধা ও ভালবাসার এক ইতিহাস

মিথোস আমান//
একশো বছর পূর্ণ করেছেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর। উনি নেই এখনও ভাবাটা কেন যেন সহজ হয়ে ওঠেনি। তবে এই যাওয়া মানে মুছে যাওয়া নয় কোনক্রমেই। যতদিন রাগসঙ্গীত থাকবে, ততদিন থেকে যাবে রবিশঙ্কর নামটি।
মনে প্রাণে ছিলেন পুরোপুরি বাঙালি। বিশ্বব্যাপী পণ্ডিত রবিশঙ্কর ভারতীয় বাঙালি সংগীতজ্ঞ হিসেবে শ্রেষ্ঠতম একজন। রবিশঙ্কর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের ঐতিহ্য ও এ সংগীতকে ১৯৬০-এর দশকে পাশ্চাত্যের কাছে তুলে ধরেন।
এক নানামুখী জীবনবোধের মানুষ চিলেন রবিশঙ্কর। ভীষণ বর্ণাঢ্য আর বাঁকবহুল ছিল এই শিল্পীর জীবন।
১৯২০ সালের ৭ এপ্রিল তিনি জন্ম নেন ভারতের বেনারসে। রবিশঙ্করের পূর্বপুর“ষদের আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের নড়াইলের কালিয়ায়। বাবা পণ্ডিত শ্যামশঙ্কর চৌধুরী খ্যাত ছিলেন তাঁর পাণ্ডিত্য, আভিজাত্য ও শৌখিনতার জন্য। তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থেই পণ্ডিত। ১২ বছর বয়স থেকেই উদয়শঙ্করের দলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংগীতে সহযোগিতা করতে থাকেন কিশোর রবি, তাঁকে নৃত্যও করতে হতো নিয়মিত। দলের সঙ্গে তিনি সেই বয়সেই ঘুরে বেড়িয়েছেন বলতে গেলে প্রায় সমগ্র ইউরোপ।ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের মাইহার ঘরানার স্রষ্টা আচার্য আলাউদ্দিন খাঁর শিষ্য ছিলেন তিনি। ইউরোপ থেকে মাইহারে ফেরার আগে আলাউদ্দিন খাঁ বলেছিলেন, ‘সব ছেড়ে যদি আসতে পারো, তবেই তোমাকে শেখাব।’ সবকিছু ছেড়েছুড়ে রবিশঙ্কর ফিরেছিলেন গুর“র কাছে।
৬০ বছরের সংগীতসাধনার জীবন ছিল তার। এই দীর্ঘ সাধানয় জুটেছে গিনেস বুকে নাম।
পারিবারিক জীবনে ২১ বছর বয়সে রবিশঙ্কর বিয়ে করেছিলেন গুর“ আলাউদ্দিন খাঁর মেয়ে অন্নপূর্ণা দেবীকে। তাঁদের ছেলের নাম শুভেন্দ্রশঙ্কর। একসময় তাঁদের বি”েছদ হয়। পরে মার্কিন কনসার্টের উদ্যোক্তা স্যু জোন্সের সঙ্গে সম্পর্ক হয় তাঁর। তাঁদের সন্তান নোরা জোন্স সুনাম কুড়িয়েছেন জ্যাজ, পপ, আধ্যাত্মিক ও পাশ্চাত্য লোকসংগীতের শিল্পী ও সুরকার হিসেবে। নোরা ২০০৩ ও ২০০৫ সালে ১০টি শাখায় গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন। রবিশঙ্কর পরে ভক্ত সুকন্যা কৈতানকে বিয়ে করেন। তাঁদের মেয়ে আনুশকাশঙ্কর সেতারশিল্পী হিসেবে বিখ্যাত। আনুশকাই ধরে রেখেছেন বাবার ঐতিহ্যেও সেতার।
বাংলাদেশের সাথে রবিশঙ্করের রয়েছে সুগভীর সর্ম্পক। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রবিশঙ্করের ভূমিকা আমাদের ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার কথা জেনে তিনি বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। এই সময় তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাংলায় দুটি গান লিখে রেকর্ড করেছিলেন। সে সময় বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যের জন্য একটি কনসার্ট করার কথাও তাঁর মনে হয়। এ ব্যাপারে তিনি জর্জ হ্যারিসনের সাহায্য চাইলেন। ১৯৭১-এর ১ আগস্ট মেডিসন স্কয়ারে অনুষ্ঠিত এই কনসার্ট শুর“ হয়েছিল আলী আকবর ও রবিশঙ্করের সরোদ ও সেতারবাদন দিয়ে।
কনসার্টের শুর“তে বাংলাদেশের পল্লিগীতির সুরে ‘বাংলা ধুন’ নামে একটা পরিবেশনা করেন শাস্ত্রীয় সংগীতের গুর“ রবিশঙ্কর। আর শেষে নিজের লেখা ও সুরে ৪০ হাজার মানুষের সামনে জর্জ হ্যারিসন গাইলেন, ‘বন্ধু আমার এল একদিন/ চোখ ভরা তার শুধু হাহাকার/ বলল কেবল সহায়তা চাই/ বাঁচাতে হবে যে দেশটাকে তার/ বেদনা যদিবা না-ও থাকে তবু/ জানি আমি, কিছু করতেই হবে/ সকলের কাছে মিনতি জানাই/ আজ আমি তাই/ কয়েকটি প্রাণ এসো না বাঁচাই/ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ/’ (অনুবাদ: সাজ্জাদ শরিফ)
২০১২ সালে মারা যান পণ্ডিত রবিশঙ্কর। তার আগে ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয় কনসার্ট ফর বাংলাদেশ অ্যালবামের ডিভিডি। তার ভূমিকায় নড়াইলের সন্তান রবিশঙ্কর লিখেছিলেন, ৭৫ বছরের সংগীতজীবনে তিনি যত কনসার্ট করেছেন, তার মধ্যে স্মরণীয় হয়ে আছে কনসার্ট ফর বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধের মৈত্রী সম্মাননা দিয়ে এই মহান বন্ধুর প্রতি সম্মান জানায়।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Comments are closed.

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net